কক্সবাজার, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

শর্ত বিধি না মেনে সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ

দীপক শর্মা দীপু ::

 

করোনা সংকটের কারনে দীর্ঘ ৫ মাস পর্যটন বন্ধ থাকার পর গত ১৭ আগষ্ট কক্সবাজারের পর্যটন উন্মুক্ত করা হয়েছে। সেই থেকে ক্রমান্বয়ে পর্যটকের ভীড় বাড়ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। তবে ভ্রমনে স্থানীয়দের আধিক্য বেশি। জেলা প্রশাসনের দেয়া শর্ত মানা হচ্ছেনা, মানা হচ্ছেনা কোন স্বাস্থ্য বিধি নিষেধ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২১ আগষ্ট সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার হওয়ায় কক্সবাজারের লাবনী বীচ, সুগন্ধা বীচ, কলাতলী বীচে ১০ হাজারের বেশি লোকজন ভ্রমণ করে। এসব বীচ পয়েন্টের প্রবেশ মুখে সাইনবোর্ডে লেখা হয় ‘মাস্ক ছাড়া সৈকতে প্রবেশ নিষেধ’। জেলা প্রশাসনের দেয়া এমন লেখা থাকলেও কেউ মানছেনা। সবাই মাস্ক ছাড়াই সৈকতে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শতকরা ৯৫ জনের সৈকতের ভ্রমণকারিদের মুখে মাস্ক নেই। এমন কি বীচ ফটোগ্রাফার, বীচ কর্মী, বীচ বাইক চালকসহ সৈকতে সেবা প্রদানকারিদের অনেককে দেখা গেছে মাস্ক ছাড়াই পর্যটকদের সেবা দিতে। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে আসা দম্পতি নাজনিন বেগম ও তার স্বামী রিয়াজুল ইসলাম জানান, সৈকতের প্রবেশের সময় মাস্ক দিয়েই প্রবেশ করেছি। যখন পরে দেখছি বীচে সবাই মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন আমরাও মাস্ক ছাড়া ঘুরছি। কক্সবাজারের স্থানীয় তারাবনিয়ার ছড়ার সোহেল, তানভীর, কায়সার এই তিন বন্ধু জানান, ঘরে বাইরে সবখানে মাস্ক দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে গেছি। কোথাও মাস্ক খুলে মুক্ত হাওয়া নিতে পারছিনা। এখন বীচে আসছি মুক্ত হাওয়ায় প্রাণভরে নি:শ^াস নেয়ার জন্য । এখানেও মাস্ক দিতে হলে ভ্রমণ না করাই ভালো হবে।

শুধু মাস্ক দিচ্ছেনা তা নয়, ভ্রমণকারিরা শারিরীক দুরুত্ব বজায় রাখছেন না। একসাথে জড়ো হয়ে আড্ডা দিচেছন। কীটকট (ছাতা) বসানো হয়েছে একটার সাথে একটা লাগানো। একটা কিটকটে একাধিক লোক বসছেন। একটা বীচ বাইকে একাধিক লোক ছড়ছেন। কীটকট ও বীচ বাইকে জীবানু নাশক ছিটানো হয়না। বীচে ফুটবলও খেলছে অনেকে। ৩০/৪০ জনের গণ জমায়েত হচ্ছে সৈকতে। সৈকতের দোকানগুলোতে গাদাগাদি করে ব্যবসা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন স্বাস্থ্য বিধিসহ ৫৯ টি শর্ত সাপেক্ষে কক্সবাজার শহরের পর্যটন উন্মুক্ত করেছেন। এরমধ্যে ৬ টি সাধারণ শর্ত আর ৫৪ টি হচ্ছে বিশেষ শর্ত। গত ১৭ আগষ্ট থেকে পর্যটন উন্মুক্ত করার পর থেকে খুবই কম সংখ্যক পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। তবে স্থানীয়রা পর্যটন স্পট গুলোতে ভীড় করছে। এতে করে পর্যটন শহরের ৪ শতাধিক হোটেলে পর্যটক অতিথি নেই বললেই চলে। কক্সবাজারের তারকা মানের হোটেল উইন্ডি টেরস এর জিএম আকীন চৌধুরী জানান, পর্যটন ব্যবসায় সবচেয়ে মন্দা সময় কাটছে এই বছর। পর্যটন উন্মুক্ত করা হলেও তেমন উল্লেখ্যযোগ্য পর্যটক নেই। তবে তারকা মানের এই হোটেলে ২০ ভাগ হোটেলের রুম বুকিং রয়েছে বলে তিনি জানান।

কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ আবুল কাশেম জানান, স্বাস্থ্য বিধি ও প্রশাসনের দেয়া শর্ত মেনে সকল আবাসিক হোটেল খোলা হয়েছে। একদিকে করোনা পরিস্থিতি অন্যদিকে বৈরি আবাহাওয়ার কারনে কক্সবাজারের বাইরের পর্যটক নেই বললে চলে। প্রত্যেক হোটেলে গুটি কয়েকজন রয়েছেন। আবার অনেক হোটেল রয়েছে পর্যটক শূন্য। পর্যটকদের প্রশাসনের দেয়া বিধি বিধান মেনে চলার জন্য হোটেল কতৃপক্ষ থেকে সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও হোটেল থেকে বের হলে অনেক পর্যটন স্বাস্থ্য বিধি না মেনে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলে দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান জাহেদ জানান, স্বাস্থ্য বিধি না মানায় সৈকতসহ পর্যটন জোনে নিয়মিত অভিযান হচ্ছে। অনেককে জরিমানাও করা হয়েছে। অনেক সময় বেশি সংখ্যক পর্যটক হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা সময় সাপেক্ষ হয়ে পড়ে । তিনি গত কয়েকদিন আগে একজন কিশোর সমুদ্রে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, এখন বৈরি আবাহাওয়ার কারনে সমুদ্রে গোসল করা নিরাপদ নয়। তাই পর্যটকদের গোসল করা থেকে বিরত রাখতে ট্যুরিষ্ট পুলিশ, বীচ কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, লাইফ গার্ডসহ সবাই একসাথে কাজ করছেন। শর্ত মানছে কিনা পর্যটকরা এ বিষয়ে এদিকে শতভাগ সময় দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তবে সবাইকে শর্ত মেনে ভ্রমণ করা ও সেবা প্রদানে বাধ্য করা হবে।

পাঠকের মতামত: