কক্সবাজার, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

চীনের জিরো-কোভিড নীতির বলি প্রতিবেশী দেশগুলোর ফল চাষিরা

চীনে চলছে শীতকালীন অলিম্পিকের আসর। আসরটিকে নির্বিঘ্ন করতে কঠোর ‘জিরো-কোভিড নীতি’ আরোপ করেছে দেশটি। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ভেন্যুর আশপাশের প্রদেশগুলো। এখানেই শেষ নয়, করোনার উপস্থিতির কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে ফল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে বেইজিং। ঘোষণা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের কৃষকর ও উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা। ঋণের জালে জড়িয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন পার করছেন তারা।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে চীনে মোট ফল রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু হঠাৎ করে এত বড় একটি বাজার স্থগিত হওয়ায় এর প্রভাব মারাত্মকভাবে ভোগাচ্ছে কৃষকদের।

তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য শিগগিরই অন্য কোথাও রপ্তানি করা সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদাও এতটা নয় যে, সেগুলো বিক্রি করে তারা অন্তত কিছুটা ক্ষতি কমাবেন।

ভিয়েতনামের একজন কৃষক ফাম থান হং। তিনি জানান, ‘চীন রপ্তানি বন্ধ করায় আমরা হতাশ। এই ফলের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কম। এখানে কোনভাবেই বিক্রি সম্ভব নয়। ক’দিন আগে আমার খেতের পাকা ড্রাগন প্রতিবেশিকে দিয়ে দিয়েছি তিনি যেন তার খামারের মুরগীকে তা খাওয়াতে পারেন’। স্পষ্টতই এখানে কৃষকদের করুণ অবস্থা ফুটে উঠেছে।

ভিয়েতনাম ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড্যাং ফুক গুয়েন বলেছেন, ‘চীন ভিয়েতনামকে আগে থেকে কিছু জানায়নি। এটা অন্যায়।’ তিনি জানান, এক মিলিয়নেরও বেশি ভিয়েতনামী ড্রাগন ফল, আম ও কাঁঠাল চাষ করেন। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, চীনে বছরে ৩.২ বিলিয়ন ডলারের ফল ও সবজি রপ্তানি করে ভিয়েতনাম। যার প্রধান ড্রাগন ফল।

ভিয়েতনামের সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিক ম্যানেজমেন্টের অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ একজন পরিচালক নুয়েন আনহ ডুওং বলেছেন, ভিয়েতনামের স্থানীয় সুপারমার্কেটগুলোতে ড্রাগন ফল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিকল্প বাজার খুঁজছে ভিয়েতনামের সরকার। তবে বিকল্প বাজার খুঁজে পেলেও তা চীনের চেয়ে বেশি সুবিধাজনক হবে না বলেও জানান তিনি৷ কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অন্য দেশে ফল পাঠাতে প্লেন ও জাহাজ ব্যবহার করলে খরচ বেশি হবে। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফল-উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলো থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিমানবন্দর থেকে অনেক দূরে।

আপাতত ফল চাষীদের জন্য আরও বড় বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলে মনে হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ- যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত ছাড়াই আমদানি করা ফলে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এমন ধারণা ও বিক্ষিপ্ত ঘটনার জেরে চীনের আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত এক পাক্ষিক। চীনের উচিত ছিলো, রপ্তানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা করা। কিন্তু তারা যেহেতু সেটি মনে করিনি, তাই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও দেশগুলোর উচিত চীনের বাইরে তাদের নতুন বাজার তৈরি করা। কারণ, চীন যে শুধু এবারই আমদানি বন্ধ করেছে, আর করবে না তার নিশ্চয়তা নেই।
সূত্র: নিউইয়ার্ক টাইমস

পাঠকের মতামত: