কক্সবাজার, রোববার, ৫ মে ২০২৪

‘আমি কালো, তাই আমার গাঁয়ে এসিড দিয়েছে’

বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে আমাকে নির্যাতন করতো আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। আমার অপরাধ হল আমি দেখতে কালো। আমি কালো হওয়ায় স্বামীও আমাকে নিয়ে সংসার করতে চায় না। শুনেছি সে ঢাকায় নাকি আরও বিয়ে করেছে। আমি সেখানে সংসার করার জন্য অনেক অত্যাচার সহ্য করেছি। তারপরও আমাকে এসিড দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন। আমি কালো হওয়ায় আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমার গায়ে এসিড দিয়েছে। কালো হওয়া কি আমার অপরাধ? আমি স্বামীর সংসার করতে চাই। এভাবেই কথাগুলো বলতে বলতে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন এসিড আক্রান্তের শিকার গৃহবধু মাহমুদা বেগম।

এদিকে ঘটনার ৪১ দিন অতিবাহিত হলেও ওই ঘটনার প্রধান আসামী তার শ্বশুর আতোয়ার রহমান এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ার অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন ওই গৃহবধু ও তাঁর পরিবার।

জানা যায়, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার নওদাবাস ইউনিয়নের কেতকীবাড়ি গ্রামের আব্দুল মালেকের মেয়ে মাহমুদা বেগমের সঙ্গে প্রায় ৪ বছর পূর্বে টংভাঙ্গা ইউনিয়নের গেন্দুকুড়ি গ্রামের আতোয়ার রহমানের পূত্র হামিদুল ইসলামের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী হামিদুল শ্বশুর আতোয়ার শ্বাশুরী হামিদাসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন মাহমুদা বেগমকে কারনে অকারণে নির্যাতনসহ তালাকের হুমকি দিয়ে আসছে।

গত ১৩ জুলাই রাত সাড়ে আটটার দিকে শ্বশুর আতোয়ার রহমান ও শ্বাশুরী হামিদা বেগমসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন মাহমুদা বেগমের গায়ে এসিড ঢেলে দেয়। এ সময় তার চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে মাহমুদা বেগমকে উদ্ধার করে প্রথমে হাতীবান্ধা হাসপাতাল পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। এ ঘটনায় পরের দিন ১৪ জুলাই ওই গৃহবধু মাহমুদা বেগমের বাবা আব্দুল মালেক বাদি হয়ে হাতীবান্ধা থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ আছিয়া বেগম নামে ওই গৃহবধুর এক ননদকে আটক করলেও ঘটনার ৪১ দিন অতিবাহিত হলেও প্রধান আসামী শ্বশুর আতোয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ফলে মামলার বাদিসহ নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধু অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।

সরে জমিনে ওই গৃহবধুর শ্বশুরবাড়ি গেন্দুকুড়ি এলাকায় গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, বিয়ের পর থেকে কারনে অকারনে শ্বশুর আতোয়ার ও শ্বাশুরী হামিদা তাদের পূত্রবধু মাহমুদাকে নির্যাতন করে। নানা অজুহাতে স্বামী হামিদুল প্রায় সময় বাহিরে থাকে। ওই গৃহবধুকে প্রতিবেশী কারো সঙ্গে কথা বলতে দিত না। কোন প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বললে তাঁর উপর চলতো অমানুষিক নির্যাতন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও হাতীবান্ধা থানার উপ-পরিদর্শক আঙ্গুর মিয়া জানান, এ মামলার একজন এজাহারভুক্ত আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

হাতীবান্ধা থানার ওসি শাহা আলম জানান, এ ঘটনার বাকি আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রধান আসামীসহ সকল আসামীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে পারব।

পাঠকের মতামত: