কক্সবাজার, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

একযোগে সাত মহাদেশে জলবায়ু আন্দোলন

বিশ্বজুড়ে একযোগে আন্দোলনে নেমেছে তরুণ পরিবেশবাদীরা। কপ২৬ শীর্ষ জলবায়ু সম্মেলনের পর শুক্রবার (২৫ মার্চ) প্রথমবারের মতো সাত মহাদেশে একযোগে পরিবেশ রক্ষার এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। পরিবেশবাদী আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’র নেতৃত্বে এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে মূলত স্কুল শিক্ষার্থীরা।

এদিন একযোগে সাত মহাদেশব্যাপী এই আন্দোলন শুরু হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে। এরপর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে।

প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে দূষণবিরোধী নানা স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে গোটা বিশ্বে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিতসহ পরিবেশ বাঁচানোর দাবি বিক্ষোভকারীদের।

জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে জার্মানির বার্লিনে বিশাল সমাবেশ ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’র আয়োজনে দেশটির বিভিন্ন সংগঠনের কয়েক হাজার সদস্যসহ এতে অংশ নেয় অগনিত সাধারণ মানুষ।

ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন মতে, শুধু বড়রাই নন, আন্দোলনে যোগ দিয়েছে স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরাও। বিক্ষোভকারীরা বলছে, পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেনসহ বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি, কলকারখানা-বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দূষিত বর্জ্য পদার্থে যেভাবে দূষণ বাড়ছে এখনই তা রোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো চরম মূল্য দিতে হতে পারে। তাই সংশ্লিষ্টদের দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তাদের।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, ‘ইউরোপের মানুষ কি বুঝতে শুরু করেছে পরিবেশ কতটা দূষিত? কার্বন নিঃসরণের হার কমাতে সংশ্লিদের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

একই দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে ফ্রান্সেও। হাতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার-ফেস্টুনসহ নানা স্লোগানে মুখরিত প্রতিবাদকারীরা শিগগিরই দেশকে দূষণমুক্ত করতে সরকারের প্রতি বিকল্প চিন্তার দাবি জানান।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন বিক্ষোভকারীরা। রাজধানী প্যারিসে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, ‘আমরা এখানে জড়ো হয়েছি যাতে সরকারের চোখে পড়ে এবং দ্রুত তারা পদক্ষেপ নেন। বাসযোগ্য পৃথিবী চাই আমরা।’

বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দূষণ বিরোধী নানা স্লোগানে মুখরিত বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসও। প্রতিবাদকারীরা বলছিলেন, দেশকে পরিবেশ বান্ধব করতে যুগোপযুগী পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময়।

একই দাবিতে উত্তাল ইতালি ও অস্ট্রেলিয়াও। ‘ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ সংগঠনের আহ্বানে রাস্তায় নামেন দেশ দুটির হাজার হাজার মানুষ।

শুধু ইউরোপের দেশগুলোতেই নয়, প্রতিবাদ-সমাবেশের ব্যপ্তি ছড়িয়েছে এশিয়ার দেশগুলোতেও। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতেও ’ফ্রাইডে ফর ফিউচার’ সংগঠনের আহ্বানে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে পরিবেশবাদী থেকে শুরু করে সাধারণদের।

নয়াদিল্লির একটি বিক্ষোভ থেকে এক শিক্ষার্থী বলছিলেন, সম্প্রতি জলবায়ু প্রতিবেদনগুলোতে পরিষ্কার হয়েছে, দিল্লি পুরোবিশ্বের মধ্যে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় একদম ওপরের দিকে। এমনকি ভারতজুড়ে দূষণের হার বাড়ছেই। এ বিষয়ে সরকারের আরো নজর দেওয়া উচিত।

কপ২৬ জলবায়ু সম্মেলন শেষ হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বিশ্বজুড়ে এতো বড় পরিসরে একযোগে জলবায়ু আন্দোলনে নেমেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তরুণ পরিবেশবাদীরা। দূষণ বন্ধ হয়ে প্রকৃতি হবে সুন্দর, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

পাঠকের মতামত: