কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার উপকূলে ৬৫ হাজার একর জমিতে শুরু হচ্ছে চিংড়ি চাষ

লবণ মৌসুম প্রায় শেষ। চলতি মাস থেকেই কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে পুরোদমে শুরু হচ্ছে চিংড়ি চাষ। ইতোমধ্যে অধিকাংশ প্রজেক্টে চাষ শুরু হয়েছে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে এখন চলছে ঘের সংস্কার ও পোনা মজুদের কাজ।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় জেলায় অন্তত ৬৫ হাজার একর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হবে চলতি মৌসুমে। সবকটি প্রজেক্টেই মৎস্য অধিদপ্তর নজর রাখেন এমন দাবী সংশ্লিষ্টদের।  চাইলে জেলা মৎস্য বিভাগ চাষীদের প্রয়োজনীয় সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে থাকে।
চিংড়ি পোনা সরবরাহকারী হোয়ানক ইউনিয়নের ফকিরখালী গ্রামের আজিজুর রহমান বলেন, গত মৌসুমে চিংড়ি চাষীরা লাভবান হয়েছেন। তাই চাষীদের মাঝে তেমন উদ্বেগ নেই। জেলা মৎস্য বিভাগ প্রয়োজনীয় সহযোগীতা দিয়ে থাকেন। এছাড়া বাগদা চিংড়ির ন্যায্যমূল্য থাকায় চাষীরা আরো উৎসাহী হয়েছেন। এছাড়া বর্তমান সরকারের বহুমূখী উদ্যোগ চিংড়ি চাষ আরো একধাপ এগিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন চলতি মৌসুমে স্থানীয় পোনার চাইতে হ্যাচারীতে উৎপাদিত পোনার চাহিদা বেশী। ইতোমধ্যে ৪/৫টি প্রজেক্টে প্রায় ৭০ লাখ পর্যন্ত চিংড়ি পোনা সরবরাহ করা হয়েছে। চাষ পুরোদমে শুরু হলে চাহিদা আরো বাড়বে।
কুতুবদিয়ার চিংড়ি চাষী মিজানুর রহমান টিটু জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে লবণ চাষ শেষ হয়েছে। বৃষ্টি না হলে কিছু প্রজেক্টে আরো কিছু দিন চলবে লবণ মাঠ। দখলবাজী চিংড়ি প্রজেক্টের বড় সমস্যা এমন দাবী করে তিনি বলেন, জমির মালিকরা কোন সময় জমির ন্যায্যমুল্য পায় না। যেখানে একর প্রতি ১০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে সেখানে ৩/৪ হাজার টাকার বেশী পায় না। তা জমির মালিকদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।

বদরখালীর চিংড়ি ব্যবসায়ি সাবেক মেম্বার বেলাল আহমদ জানিয়েছেন, বর্তমানে বাগদা চিংড়ির মূল্য বেশী থাকায় সবাই প্রজেক্টের দিকে নজর দিয়েছে। তাই দ্রæত গতিতে চলছে প্রজেক্টের কাজ। অনেকেই আরো দুই মাস আগে নার্সারী করে পোনা মওজুত করেছে। চাষ শুরু হলেই সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের দৌরাত্ব বেড়ে যায়। বিশেষ করে রামপুর এলাকায় চিংড়ি চাষ করা অত্যন্ত ঝুকিপুর্ণ। একটি প্রভাবশালী মহল এলাকার সবকটি প্রজেক্টই নিয়ন্ত্রণ করে।
জানা গেছে, গত বর্ষা মৌসুমে চিংড়ির আশানুরূপ উৎপাদনের ফলে লাভের মুখ দেখায় চলতি মৌসুমে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজে নেমেছেন চিংড়ি চাষিরা। জেলার দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ উপক‚লীয় এলাকায় শুরু হয়েছে চাষ।
মহেশখালী ধলঘাট সিকদার পাড়ার শওকত আলী জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমে ধলঘাটার মানুষের আয়ের একমাত্র পথ চিংড়ী চাষ। ইতোমধ্যে চাষীরা বিপুল পরিমান টাকা প্রজেক্টে বিনিয়োগ করেছে। তাই জমির মালিকরা যাতে ঠিকমত টাকা পায় সে জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল হাই জানিয়েছেন, চিংড়ি প্রজেক্টে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তাই পুলিশের পক্ষ থেকে আরো কঠোর অবস্থান নেওয়া হবে। কোন চাষী কিংবা জমির মালিক অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, চিংড়ি চাষীদের প্রতি আমাদের দৃস্টি রয়েছে। কোন সমস্যা হলে আমরা পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করতে প্রস্তুতি রয়েছি।

পাঠকের মতামত: