কক্সবাজার, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

পর্যটনের অপার সম্ভাবনা ‘রূপসী মরিচ্যা গোয়ালিয়া’

সুউচ্চ পাহাড় আর সবুজের সমারোহ ‘গোয়ালিয়া ঢালা।’ পাহাড় ছেদ করে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা গোয়ালিয়া সড়কের নৈসর্গিক দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে যায়। পাহাড় আর সড়কের মিতালী যেন এক রোমাঞ্চকর ভ্রমণের মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে পর্যটকদের কাছে। এ কারণে দিন দিন পর্যটকদের আগমন বাড়ছে গোয়ালিয়া ঢালায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই নৈসর্গিক ‘গোয়ালিয়া ঢালা’ হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট।

কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে ‘গোয়ালিয়া ঢালা’। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ হয়ে রেজুখাল ব্রিজ পর্যন্ত গেলেই চোখে পড়বে গোয়ালিয়া সড়ক। মূলত রেজুখাল ব্রিজ থেকেই পায়ে হেঁটে যাওয়া যায় এই পর্যটন স্পটে। ইতোমধ্যে অনেকের কাছে গোয়ালিয়া পার্ক ‘মিনি বান্দরবান’ নামে পরিচিতি পেলেও সম্প্রতি ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিনই এই এখানে দূর-দূরান্ত থেকে এসে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছেন

ঘুরতে আসা কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। পর্যটকরা জানান, নির্ভেজাল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেকে মেলে ধরতে চাইলে ‘রূপসী গোয়ালিয়া’র কোনও বিকল্প নেই।

মাইক্রোবাস নিয়ে স্বপরিবারে ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ ভ্রমণে এসেছিলেন ঢাকার ফার্মগেট এলাকার সোহেল পারভেজ। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেখার আগ্রহ অনেকদিনের। কিন্তু এখানে এসে এই নৈসর্গিক নীলাভূমির (রূপসী গোয়ালিয়া) সন্ধান পেয়েছি। এখানে না আসলে ভ্রমণের তৃপ্তিটা অপূর্ণ থেকে যেত। সুউচ্চ পাহাড় আর সবুজের সমারোহ সত্যিই যে কাউকে কাছে টানবে। বিশেষ করে বড় বড় পাহাড় ভেদ করে আঁকাবাঁকা সরু সড়কটি আমাকে বেশি মুগ্ধ করেছে।’

ছোট মেয়ে সায়মাকে নিয়ে ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ ভ্রমণে এসেছিলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার ফয়েজ উল্লাহ দম্পতি। ব্যবসায়িক কাজে কক্সবাজার শহরের রুমালিয়া ছড়া এলাকায় সপরিবারে বসবাস করলেও শহরের বাইরে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও ভ্রমণে বেরিয়েছেন ফয়েজ উল্লাহ।

ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে আছি। কিন্তু এত সুন্দর এলাকা রয়েছে তা আগে জানতাম না। আমার মনে হয় দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম রূপসী গোয়ালিয়া।’

প্রতিদিন পর্যটকদের আগমনকে পুঁজি করে পর্যটন ব্যবসায় এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় যুবক সাইফুর রহমান সোহান। পশ্চিম গোয়ালিয়া এলাকার ছৈয়দ উল্লাহ ছেলে সাইফুর রহমান সোহান বলেন, ‘কক্সবাজার বনবিভাগ একটি গোলঘর নির্মাণ করার কারণে পর্যটকদের আরও কাছে টানছে রূপসী গোয়ালিয়া। তাই একটি ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা বসিয়ে পর্যটকদের জন্য পানি, চিপস ও চটপটি বিক্রি শুরু করেছি। দিন দিন দোকানের বিক্রি অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে।’

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিবেশের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা শুধু সাগর দেখে চলে যায়। কিন্তু, রূপসী গোয়ালিয়া এমন একটি পর্যটন স্পট, যা দেখে যেকোনো মানুষের মধ্যে পাহাড়, বন ও পরিবেশের প্রতি প্রেম সৃষ্টি হবে।’

কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘এখানে না আসলে বোঝা যেত না শহরের এত কাছে মনোমুগ্ধকর এই রকম একটি পর্যটন স্পট রয়েছে। সরকারিভাবে সঠিক পরিকল্পনা হাতে নিলে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠবে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। বিশেষ করে বনবিভাগের যে ‘গোলঘর’ রয়েছে, ঠিক এর পাশে একটি বাঁধ দিয়ে লেক তৈরি করলে পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ হবে।’

জানতে চাইলে কক্সবাজার বনবিভাগের দক্ষিণ বিভাগীয় কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পর্যটনের বিষয়ে কোনও ধরনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়নি। বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সুবিধার্থে গোয়ালিয়া সড়কের পাশে একটি‘গোলঘর স্থাপন করা হয়েছে। মূলত বিশ্রামের জন্য এটি তৈরি করা হলেও এখন দেখছি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘চলতি বছর পাহাড়গুলোতে বনবিভাগ বাগান সৃজন করেছে। প্রায় ৭৫ হেক্টর বনভূমিতে গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। আগামী বছর আরও ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বাগান সৃজন করা হবে। রেজুখালের পাশের সুউচ্চ পাহাড় থেকে গোয়ালিয়া সড়ক হয়ে দক্ষিণ গোয়ালিয়া পর্যন্ত সবুজ বনায়ন সৃষ্টি করা হবে। তবে সরকার যদি মনে করে তাহলে সেখানে পর্যটন স্পট গড়ে উঠতে পারে।’

পাঠকের মতামত: