কক্সবাজার, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

কক্সবাজার সৈকতে টয়লেটের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পর্যটকরা

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতের কলাতলী পয়েন্টের বালিয়াড়িতে টয়লেট বসানো হয়েছে। আর এই টয়লেট থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ফলে সমুদ্রের প্রবেশ মুখের এই পাবলিক টয়লেটটি পর্যটকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে টয়লেটে ঝুলানো সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে জেলা প্রশাসন কর্তৃক অনুমোদিত। লেখা আছে পরিবেশ বান্ধব। কিন্তু বাস্তব চিত্র ঠিক উল্টো। টয়লেটের দূষিত পানি বালিয়াড়িতে মিশে যাওয়ায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে নষ্ট হচ্ছে সৈকতের নির্মল পরিবেশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে পাবলিক টয়লেটটি ইজারা নিয়েছেন রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা শফিক নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি পাবলিক এই টয়েলেটটি পরিচালনা করার জন্য স্থানীয় সোহেলসহ কয়েকজন ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিয়েছেন।

শনিবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টয়লেটের দুর্গন্ধযুক্ত পানি বালিয়াড়িতে মিশে গেছে। পর্যটকরা নাক চেপে কোনো মতে পার হচ্ছে এই জায়গাটি।

স্থানীয়রা জানান, কলাতলী পয়েন্ট থেকে সমুদ্রসৈকতে প্রবেশদ্বারে টয়লেটটি স্থাপন করা মোটেও উচিৎ হয়নি। কলাতলীর আশেপাশে পরিত্যক্ত অনেক জায়গা রয়েছে। জেলা প্রশাসন চাইলে সেসব জায়গায় পাবলিক টয়লেট করতে পারতো। কিন্তু সাগরলতা ধ্বংস করে সৈকতের বালিয়াড়িতে এই পাবলিক টয়লেটটি পর্যকদের ভোগান্তির প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে আসা পর্যটক সানজিদুল কবির বলেন, ‘কলাতলী পয়েন্টের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য সমুদ্রসৈকতে নামতে গিয়ে দেখি প্রবেশদ্বারে পাবলিক টয়লেট। টয়লেটের নোংরা পানি বালিয়াড়িতে গড়াচ্ছে। পানির দুর্গন্ধে আর ওই পথ দিয়ে সমুদ্রে নামতে পারিনি। অন্য পথ ব্যবহার করে সমুদ্রসৈকতে নামি। প্রশাসনের নামে এমন জায়গায় পাবলিক টয়লেট কী করে হয় সেটি ভেবে পাচ্ছি না।’

টাঙ্গাইলের মধুপুর থেকে আসা সরকারি চাকরিজীবী ফিরোজ রায়হান বলেন, ‘এই টয়লেটের নোংরা পানির দুর্গন্ধে আমার ৭ বছরের মেয়েটি বমি করেছে। কক্সবাজারে আসি একটু শান্তির জন্য। কিন্তু এখানে এসে দেখি সব অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’

পাবলিক টয়লেটটির পরিচালক সোহেল বলেন, ‘টয়লেটটি জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা নিয়েছে ঢাকার শফিক। আপনি তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি কিছু বলতে পারবো না।’

এবিষয়ে জানতে শফিকের মোবাইলে সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘কলাতলী একটি ব্যস্ততম পয়েন্ট। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে যাত্রীবাহী যানবাহন বেশিরভাগ এখানে এসে থামে। এমন একটি জায়গায় সৈকতের সাগরলতা ধ্বংস করে বালিয়াড়িতে পাবলিক টয়লেট করা পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতির কারণ। টয়লেটের নোংরা পানির দুর্গন্ধে পর্যটকরা অসুস্থ হতে পারে। পর্যটক চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে। যদি পরিবেশ সুন্দর রাখতে হয় তবে সৈকত থেকে টয়লেট উচ্ছেদের বিকল্প নেই।’

পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘প্রথমত ইসিএ (প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা) আইন অনুযায়ী কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়িতে স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া সৈকত জুড়ে এভাবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি সার্বিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট করছে।’  কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ ও সৌন্দর্য ধরে রাখতে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা, ঢেউ, সৈকত, বালিয়াড়ি, খাঁড়ি, বালিয়াড়িতে সৃষ্ট সাগরলতা, লতাগুল্ম সহ বিভিন্ন উদ্ভিদ অক্ষুণ্ণ রেখে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকান্ডের পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘সরেজমিনে গিয়ে বিষয়টি দেখেছি। টয়লেট পরিচালনায় যারা আছেন তারা বলছেন, ঘেরাও করা কাপড়টি ধুতে গিয়ে পানি সৈকতের বালিয়াড়িতে গড়িয়েছে। এগুলো টয়লেটের নোংরা পানি না। কিন্তু তাদের কথাগুলো আমার কাছে মিথ্যা মনে হয়েছে। আমি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে এ বিষয়ে অবগত করেছি। তার নির্দেশনা মতে পর্যটকসহ কারো যেন ক্ষতি না হয় সে ব্যবস্থা করা হবে।’

পাঠকের মতামত: