কক্সবাজার, বুধবার, ১ মে ২০২৪

জুমার দিন আসরের পরের আমল

জুমআ মুসলমানের সপ্তাহিক বিশেষ ইবাদতের দিন। এ দিনের ইবাদতের ফজিলত অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। এ দিনের ইবাদতের নির্দেশ ও গুরুত্ব তুলে ধরে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—

‘মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ৯-১০)

জুমআর দিনের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। তারমধ্যে একটি হলো আসর থেকে মাগরিবের মধ্যে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট্ট একটি দরূদ পড়া। আর অপরটি হলো আসর-মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ে ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা।

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, জুমার দিনে এমন একটা সময়ে রয়েছে, যাতে আল্লাহর বান্দা আল্লাহর ক‍াছে যা চায় আল্লাহ তাই দেন। অতএব তোমরা আছরের শেষ সময়ে তা তালাস করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮, নাসাঈ, হাদিস : ১৩৮৯)

আল্লাহ অবশ্যই এ সময় দোয়া কবুল করেন

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন— জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাসুল (সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪০০)

আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বর্ণনা করেন, শুক্রবারে আছরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ যাদুল মাআ’দ-এ বর্ণিত আছে, জুমার দিন আছরের নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়। (যাদুল মাআ’দ : ২/৩৯৪)

ইমাম আহমদ (রহ.)-ও একই কথা বলেছেন। (তিরমিজির ২য় খণ্ডের ৩৬০ নং পৃষ্ঠায় কথাটি উল্লেখ আছে)

আসরের শেষ সময়ে দোয়া কবুল

অর্থাৎ সূর্য ডোবার আগমুহূর্তে। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এ মুহূর্তটি তোমরা আসরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান করো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, জুমাবারে এমন একটি সময় আছে, যেটাতে বান্দা আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দিয়ে থাকেন। (মুসান্নাফ, হাদিস : ৫৫৮৮)

আল্লাহর কাছে বান্দার চাহিদার শেষ নেই। এসব চাহিদা পূরণে হাদিসে নির্ধারিত সময়ে দোয়া করার বিকল্প নেই। তাই জুমার দিন আসরের পর থেকে মাগরিবের আগ পর্যন্ত সময়ে দাঁড়িয়ে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি প্রার্থনা করা। কাঙ্ক্ষিত চাহিদাগুলো সবিনয়ে তুলে ধরা। হাদিসের ওপর আমল করাই মুমিন মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।

হাদিসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় এ বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, আসর থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত অর্থাৎ মাগরিব পর্যন্ত সময়ে আল্লাহর কাছে যে দোয়া-ই করা হয়, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করে নেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমআর দিন হাদিসে নির্দেশিত সময়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলো তুলে ধরা। আল্লাহর কাছে রোনাজারি করে নিজেদের চাহিদার জন্য বেশি বেশি প্রার্থনা করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর দিনের দোয়া কবুলের মুহূর্ত আসর থেকে সূর্য ডোবা পর্যন্ত সময়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পাঠকের মতামত: