কক্সবাজার, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রাথমিকের তদন্ত দায়সারা, কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠলেও ঠিকমতো তদন্ত হয় না। দায়সারা গোছের তদন্তের কারণে দোষীরা প্রায়ই ছাড় পেয়ে যান। অনেক সময় গুরুতর অভিযোগেও তদন্ত করা হয় না, আবার কখনও দোষী না হয়েও দায়সারা তদন্তের কারণে হয়রানির শিকার হতে হয় অনেক শিক্ষককে।

তবে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। সম্প্রতি মাসিক সমন্বয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে ওই সভায়। মাসিক সমন্বয় সভায় দায়সারা গোছের তদন্ত নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মো. মনসুরুল আলম। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি তিনি।

অভিযোগে জানা গেছে, মাঠ পর্যায়ের সহকারী উপজেলা বা থানা শিক্ষা অফিসাররা শিক্ষকদের কাছ থেকে গিফট নেওয়া থেকে শুরু করে অধিদফতরের ভেতরেই শিক্ষক বদলি করে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বারবার। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও তেমন কোনও প্রতিকার হয়নি তদন্ত প্রতিবেদনের দুর্বলতা এবং ‘ঘাপলা’ থাকার কারণে।

অভিযোগ মতে, ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওই সময়ের পলিসি ও অপারেশনের পরিচালকের অফিসিয়াল ইমেইল থেকে (dripolicydpe@gmail.com) চট্টগ্রামের পাঁচ জন সহকারী শিক্ষকের বদলির আদেশ পাঠানো হয় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের অফিসিয়াল (dirpolichitt@gmail.com) ইমেইলে। পরিচালকের অফিসিয়াল মেইল থেকে এই ইমেইল পাঠানো হয়েছে ওই দিন দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটের সময়। বদলি হওয়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা আদেশ নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করতে পারেননি। কারণ বদলির বিষয়ে কোনও ফাইল অনুমোদন ছাড়াই বদলির আদেশ তৈরি করা হয় এবং তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রামে। পরে এই আদেশ ভুয়া হিসেবে ধরা পড়ে। বাংলা ট্রিবিউনে এই ঘটনায় একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এদিকে গত বছর ৩ ডিসেম্বর প্রাথমিকের ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক মো. ইফতেখার হোসেন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে দেখা গেছে, ঢাকার কেরানীগঞ্জ সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কাছ থেকে জোর করে শাক-সবজি, তরি-তরকারি, লাউ, ডিম, দুধ, মাংস, দেশি মুরগী, আম-কাঁঠাল, বাসা থেকে রান্না করা খাবার গিফট নেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এতে আরও বলা হয়, পরিদর্শনে গেলে সিএনজি ভাড়া ও রিজার্ভ করে নেওয়া, আড়ং ভাউচার গিফট, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার, আয়রন মেশিন, টেবিল ফ্যান, ইত্যাদি গিফট নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমবারের মতো সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে সতর্ক করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয় চিঠিতে। এই বিষয়টি নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যদিকে অপরাধ করে কর্মকর্তারা পার পেলেও শিক্ষকরা ছাড় পান না। যেকোনও ছোট কারণেও সাময়িক বরখাস্ত হতে হয়ে। জানা গেছে, অসুস্থতার কারণে ছুটির আবেদন দেওয়ার পরও মোহাম্মদপুরের শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থানা শিক্ষা অফিসার সাময়িক বরখাস্ত করেন। অনুপস্থিতির কারণে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় ছুটির আবেদন রিসিভ করার দুইদিন পর। এই ঘটনায় বাংলা ট্রিবিউনে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ওই সময়ই বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

এসব নানা ঘটনার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের গত বছর ডিসেম্বরের মাসিক সমন্বয় সভায় অভিযোগ ওঠে প্রাথমিকের তদন্ত দায়সারা গোছের। সমন্বয় সভায় মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, তদন্ত শাখা থেকে উত্থাপিত বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা যায় যে, কোনও কোনও তদন্ত কর্মকর্তা দায়সারা গোছের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বর্ণিত সকল বিষয় প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয় না। অভিযোগের বিষয় গভীরভাবে পর্যালোচনা করে আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করেন মহাপরিচালক।

সমন্বয় সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়, সঠিকভাবে নথি উপস্থাপন করতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পত্র জারি হয়েছে কিনা তা নথিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই সভায়।

পাঠকের মতামত: