কক্সবাজার, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

ব্রাজিল পারেনি, আর্জেন্টিনা পেরেছে

ক্রোয়েশিয়াকে সহজেই বধ করতে পারবে না আর্জেন্টিনা? বিশেষ করে ক্রোয়াটরা যেভাবে আগের ম্যাচে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ধরাশায়ী করেছে তাতে সেমিফাইনাল পর্বটা বেশ কঠিনই হওয়ার কথা। এমন ধারণা নিয়ে যারা গ্যালারি কিংবা টেলিভিশনের সামনে খেলা দেখতে বসেছিলেন, তাদের সামনে সেই বিভ্রম বা বাধা কাটতে একটু সময় লেগেছে বটে। যখন গোলের পথ পরিষ্কার হতে শুরু করলো, আর্জেন্টিনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। লিওনেল মেসি পথ দেখাতে শুরু করলেন। তাতে যোগ দিলেন আলভারেজসহ সতীর্থরা। দারুণ নৈপুণ্যে ক্রোয়াটদের বাধা অতিক্রম করে আলবিসেলেস্তেরা দেখলো ফাইনালের পথ। ২০১৪ সালের পর এবার ট্রফি ছোঁয়া দূরত্বে স্কালোনির আর্জেন্টিনা।

লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার আগের ম্যাচের মতো রক্ষণ জমাট করে খেলতে লাগলো। আর্জেন্টাইনদের ওপর কিছুটা চেপে বসার সুযোগ খুঁজছিল দলটি। কিন্তু তাদের ফরোয়ার্ডরা ডি পল-মার্টিনেজ বাধা কিছুতেই পেরোতে পারেনি। আর্জেন্টিনা বরং বুঝে-শুনে গোল করার পথ বের করার চেষ্টায় ছিল। ৩৪ মিনিটে গোলে পথ সুগম হয় তাদের।

প্রতি আক্রমণ থেকে আলভারেজ ডি বক্সে ঢুকে শট নেওয়ার আগে গোলকিপার লিভাকোভিচ এগিয়ে এসে তা নস্যাৎ করে দেন। তবে তাতে বিধি সম্মত হয়নি। ইতালির রেফারি স্পট কিকের নির্দেশ দিতে সময় নেননি। যথারীতি লিওনেল মেসি এসে ডেডলক ভাঙেন। গোলকিপার বলের লাইনে পেরিয়ে একটু ওপর দিয়ে জড়িয়ে যায় জালে। এই যাত্রায় পথ দেখিয়ে আর্জেন্টাইনদের আরও উজ্জীবিত করে তুলেন মেসি। গ্যালারিতে হাজারো সমর্থকরা যেন কোরাসে গান গাওয়ার জন্য নতুন করে উদ্যোম ফিরে পায়!

এরই সঙ্গে আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলের মালিকও বনে যান মেসি। বাতিস্তুতার সঙ্গে ১০ গোল নিয়ে সমানে সমান ছিলেন। ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে জাল কাঁপিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন। এছাড়া আরও দুটি রেকর্ডের মালিকও হয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী প্লে-মেকার।

যেই ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ ৯০ মিনিটে ভাঙতে পারেনি ব্রাজিল। সেই ক্রোয়াটদের বিরতির আগে আরও একটি গোল দিয়ে তাদের ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা।

৩৯ মিনিটে আলভারেজ মধ্য মাঠ থেকে বল পেয়ে একাই তিন ডিফেন্ডারকে কসরতের পর বক্সে ঢুকে আগুয়ান গোলকিপারের পাশ দিয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। ব্রাজিলের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ে গোল হজম করে ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে ফিরে আসার চেষ্টায় ছিল। কিন্তু আর্জেন্টাইনারা সেই সুযোগ দেয়নি।

বিরতির পরও কম দাপট ছিল না আলবিসেলেস্তেদের। এবারও নেপথ্যে মেসি। যেভাবে ডান দিক ঢুকে ডিফেন্ডারকে ট্যাকল করে মাপা কাটব্যাক করেছিলেন, তাতে করে আলভারেজ শুধু ৬ গজের মধ্যে দাঁড়িয়ে জায়গা মতো প্লেসিং করে দেন।

৩ গোলের পর আর্জেন্টিনা কিন্তু ডাচদের মতো কৌশল অবলম্বন করেনি। শুরু থেকে যেভাবে খেলেছে ঠিক সেভাবে শেষটা করার প্রবণতা ছিল। যদিও রক্ষণটা ঠিকমতো যেন জমাট থাকে মার্টিনেজকে বড় পরীক্ষা না দিতে হয়, সেদিকে খেয়াল ছিল তাদের।

এই ম্যাচে ইতালির রেফারিকে সেই স্প্যানিশের মতো একের পর এক কার্ড দেখাতে হয়নি। রাত শেষে সুন্দর ফুটবলের জয়গান হয়েছে। আর্জেন্টিনা দলে মেসি কতটুকু প্রভাব রাখতে পারে। তা সেমিফাইনাল ম্যাচে আবারও ফুটে উঠেছে। তাই তো আবারও বলতে হচ্ছে, মেসি শুরুতে গোল দিয়ে পথ দেখালেন। আলভারেজ জোড়া গোল দিয়ে তাতে যোগ সমর্থন দিয়ে গেলেন।

এখন শুধু ট্রফি ছোঁয়া দূরত্বে আলবিসেলেস্তেরা। ১৯৮৬ সালের পর স্বপ্নপূরণের আরও একটি সুযোগের দ্বারপ্রান্তে ম্যারাডোনার উত্তরসূরিরা

পাঠকের মতামত: