কক্সবাজার, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

৩৮ জেলায় ভ্যাকসিন যাচ্ছে আজ

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রয়োগ শেষ হয়েছে। গ্রহণকারীদের মধ্যে বড় ধরনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না গেলে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হবে।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানিয়েছেন, প্রয়োগের লক্ষ্যে বুধবার (২৭ জানুয়ারি) রাত থেকেই ফ্রিজার ভ্যানে করে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় ভ্যাকসিন পাঠানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশের ৩৮টি জেলায় শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন। রোববারের (৩১ জানুয়ারি) মধ্যে দেশের সব জেলায় পৌঁছে দেওয়া হবে এই ভ্যাকসিন। সারাদেশে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই ভ্যাকসিন পৌঁছে দিতে কাজ করছে দেশে সিরাম ইনস্টিটিউটের একমাত্র প্রতিনিধি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) রাব্বুর রেজা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকারের আনা ৫০ লাখ ভ্যাকসিন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ওয়্যারহাউজে রাখা আছে। এরই মধ্যে সেগুলোর ল্যাব টেস্টিং রিপোর্ট পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের জেলা শহরগুলোতে আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিন পাঠিয়ে দেবো। এর জন্য ব্যবহার করা হবে বিশেষ ফ্রিজার ভ্যান। সেখান থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভ্যাকসিন পাঠাবে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে করোনা সংক্রমণের হার বেশি হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম বিভাগে ভ্যাকসিন যাচ্ছে বেশি। এই বিভাগে ১২ লাখ ৬০ হাজার ডোজ (১০৫ বাক্স) ভ্যাকসিন যাচ্ছে। রাজশাহী বিভাগে যাচ্ছে ছয় লাখ ৭২ হাজার ডোজ (৫৬ বাক্স) ভ্যাকসিন। এর বাইরে রংপুর বিভাগ ছয় লাখ ডোজ (৫০ বাক্স) এবং ঢাকা ও খুলনা বিভাগ পাচ্ছে পাঁচ লাখ ৮৮ হাজার ডোজ (৪৯ বাক্স) করে ভ্যাকসিন। এছাড়া সিলেটে ৩৭ বাক্সে চার লাখ ৪৪ হাজার ও বরিশালে ২৯ বাক্সে তিন লাখ ৪৮ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন যাচ্ছে। সবচেয়ে কম ৩ লাখ ২৪ হাজার ডোজ (২৯ বাক্স) ভ্যাকসিন যাচ্ছে ময়মনসিংহে।

অন্যদিকে জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সংক্রমণ মাত্রা কম হওয়ায় কম ভ্যাকসিন পাঠানো হবে বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, মেহেরপুর ও ঝালকাঠি জেলায়। এসব জেলায় যাবে ১২ হাজার ডোজ করে ভ্যাকসিন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সারাদেশে পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন পাঠানো হবে। ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হবে সারাদেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ইপিআই স্টোরে। এরই মধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সরকারের কিনে আনা ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিনই যাচ্ছে রাজধানীর বাইরে। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাঠানো অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন রাজধানীর জন্য রাখা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে তারা আমাদের ফোন করে জানাবেন। বড় কোনো ধরনের সমস্যা না হলে ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। এটা কোনো গবেষণা নয় যে তাদের ভ্যাকসিন দেয়ার পর এখানে রেখেই পর্যবেক্ষণ করা হবে। এটা সরাসরি ছোট পরিসরের ভ্যাকসিন প্রয়োগ। বাংলাদেশে এ ভ্যাকসিনের কোনো ট্রায়াল না হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তিনি প্রথম পাঁচজনকে ভ্যাকসিন দেয়া দেখেন। সেদিনই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ২৬ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়।

পরদিন পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনদান কর্মসূচি পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি বুথে ১৯৮ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি বুথে ১২০, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি বুথে ৬৫, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চারটি বুথে ১০০ ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে একটি বুথে ৫৮ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুতকৃত যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘কোভিশিল্ড’-এর তিন কোটি ডোজ কিনেছে সরকার। এর মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এর আগে ২১ জানুয়ারি ২০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড বাংলাদেশকে উপহার পাঠায় ভারত সরকার। ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহীদের সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে।

পাঠকের মতামত: