কক্সবাজার, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

এ বছরই টেলিটকের মাধ্যমে ফাইভ-জির যুগে বাংলাদেশ

 

দেশে পরীক্ষামূলকভাবে পঞ্চম প্রজন্মের ওয়্যারলেস সিস্টেম (ফাইভ-জি) নেটওয়ার্ক চালু করার জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে চলতি বছরই ফাইভ-জির যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি- টেলিটক এই ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করছে। এরইমধ্যে রাজধানীর বেশকিছু এলয়াকায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করছে তারা। টেলিটকের অনুকূলে ৩ দশমিক ৫ গিগাহার্জ ব্যান্ডে (৩৩৪০-৩৪০০ মেগাহার্জ) ৬০ মেগাহার্জ তরঙ্গ শর্ত সাপেক্ষে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টেলিটক নিজেদের উদ্যোগে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৫টি এলাকায় (সাইট) প্রাথমিকভাবে ফাইভ-জি সেবা চালু করবে। পরবর্তীকালে একটি ছোট প্রকল্পের আওতায় ঢাকাকেন্দ্রিক ২০০টি সাইটে এই সেবা চালু করা হবে। এটি শেষ হলে সারা দেশের জন্য বড় প্রকল্প নেয়া হবে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব মতে, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। জুলাই শেষে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখে। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ১১ কোটি ৩৬ লাখ। আর ব্রডব্যান্ডের গ্রাহকসংখ্যা ১ কোটি ৫ লাখের কিছু বেশি। সে হিসেবে দেশে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করা হলে গতি আসবে ইন্টারনেটভিত্তিক সকল প্রতিষ্ঠানে।

কবে নাগাদ দেশে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক চালু করা হতে পারে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, আগামী ১২ বা ১৬ ডিসেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে দেশে ফাইভ-জি চালু করবে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখ হলো ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস, ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। বিশেষ এবং বড় কোনো দিবসেই ফাইভ-জি চালু করা হতে পারে। যদিও তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি।

মন্ত্রী বলেন, আমরা ফাইভ-জির সফল পরীক্ষার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়েছি। অন্য দেশ যেখানে রোল-আউটের চিন্তা করছে না, সেখানে আমরা ফাইভজি রোল-আউট করে যাচ্ছি। ফাইভজির ব্যবহার করার জন্য যে ধরনের পরিবেশ তৈরির দরকার রয়েছে, সেজন্য সময় দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ফাইভজিতে পিছিয়ে থাকার কথা চিন্তা করছি না।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ফাইভ-জির জন্য তরঙ্গ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু এর সঙ্গে আরো প্রয়োজন অবকাঠামো, ডিভাইস ও নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। তা নাহলে এই ইকোসিস্টেম কাজ করবে না।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে ব্যান্ডইউথ পলিসি তৈরির কাজ চলছে। ডিসেম্বরের প্রথম ড্রাফট হবে। আগামী মার্চে পলিসটি চূড়ান্ত করা হবে। তবে তার আগে সব স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসবো। ফাইভ-জি ব্যবস্থাপনার জন্য টেলিটকের মাধ্যমে ২০২১ সালে প্রথমে ঢাকা সিটিতে ফাইভ-জি চালু হবে। এরপরে অন্যান্য অপারেটরদের নিয়ে ২০২২ সালে সারাদেশে ফাইভ-জি চালু হবে।

বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফাইভ-জি চালুর সব পক্রিয়া এগিয়ে চলছে। চলতি বছরেই ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে টেলিটক এই সেবা চালু করবে। আর টিআরএবির পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়, ফাইভ-জির জন্য আলাদা ব্রান্ডের তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়ার।

গত ২২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বর্তমানে দেশে ফোর জি সেবা চালু আছে। ফাইভ জি চালু ইন্টারনেটের গতি কয়েক গুণ বেড়ে যাবে, ফলে কাজের সুবিধাও যাবে বেড়ে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের ফাইভ জি প্রযুক্তি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। যেহেতু সরকার প্রান্তিক মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ, সে হিসেবে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও ব্যান্ডউইডথের ঘাটতিও নেই। আমাদের প্রচুর সক্ষমতা ও অপটিকাল ফাইবার রয়েছে।

সজীব ওয়াজেদ জয় আরো বলেন, প্রান্তিক ব্যবহারকারীরা ফিক্সড লাইনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না। তারা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এ জন্য আমরা স্পেকট্রাম ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। ঘনজনবসতির কারণে আমাদের ব্যাপক জায়গায় এই সংযোগ দিতে হবে এবং অতিরিক্ত সংযোগ নিলামের মাধ্যমে দিতে হবে। তাই আমরা মোবাইল অপারেটরদের জন্য অধিক স্পেকট্রাম অবাধ করে দিচ্ছি।

জয় এ সময় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর বিষয়ে বলেন, আমরা আশা করছি- অতিরিক্ত স্পেকট্রাম ব্যবহার করে মোবাইল অপারেটরগুলো দুর্গম গ্রামীণ এলাকাগুলোতে ফোর জি চালু করতে পারবে। একত্রে ফোর জি ও ফাইভ জির মাধ্যমে আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শেষ সীমানা পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যেহেতু দেশের মধ্যেই প্রচুর সক্ষমতা ও ফাইবার আছে।

ডিজিটাল পেমেন্টের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা জয় বলেন, বিগত দুই বছরে অনলাইন আইডেন্টিটি (কেওয়াইসি) চালু হয়েছে এবং মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই আরেকটি সেবা চালু হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তাৎক্ষণিক পেমেন্ট করা যাবে। এই সেবা শুরুর আগে এই পেমেন্টে দুই দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেত। আরো কিছু ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম পরীক্ষামূলক চালুর প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলেও জানান জয়।

পাঠকের মতামত: