কক্সবাজার, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

রোহিঙ্গা শিবিরে দুর্বৃত্ত দল, প্রত্যাবাসনের মাঝেই সংকটের সামাধান

দেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় ১০টি দুর্বৃত্ত দল সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে।

এতে উল্লেখ করা হয়েছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসাসহ তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং সাতটি ডাকাত দল বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় সক্রিয় রয়েছে। অধিকাংশ ক্যাম্পের ওপরই রয়েছে আরসার নিয়ন্ত্রণ।

এর মধ্যে কোনোপাড়া ক্যাম্পটি আরসার সাংগঠনিক কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ, মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। বস্তুত রোহিঙ্গা শিবিরে বিভিন্ন সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর উপস্থিতির খবর নতুন নয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে প্রায়ই সহিংস ঘটনা ঘটছে। অতি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও গোলাগুলি-খুনোখুনির মতো ঘটনা ঘটছে।

এমন তথ্যও রয়েছে যে, ক্যাম্প অশান্ত করার জন্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে বিনামূল্যে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা দিচ্ছে মিয়ানমার, যাতে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন রোধ করা যায়। আরও উদ্বেগজনক, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্তবর্তী নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখা ও তোতারদিয়া দ্বীপে জঙ্গি ঘাঁটি গড়ে ওঠার তথ্যও রয়েছে। জানা যায়, জানুয়ারিতে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত হাসানের নেতৃত্বে অন্তত ১৭ জন জঙ্গি শূন্যরেখায় একটি বাঙ্কারে সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করছিল। বলা বাহুল্য, এ পরিস্থিতি দেশের জন্য মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। কাজেই রোহিঙ্গা দুর্বৃত্ত ও জঙ্গিদের অত্যন্ত শক্ত হাতে দমন করা জরুরি।

বাংলাদেশ মানবিক কারণে মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক বিপদাপন্ন রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছিল। অথচ তাদের কারণে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আর্থসামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশ গিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে এবং এর দায়ভার বর্তাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। আমাদের উচিত জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টির গুরুত্ব ও সম্ভাব্য ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা জোরালোভাবে তুলে ধরা, যাতে তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এজন্য আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা প্রয়োজন। একমাত্র রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মাঝেই এ সমস্যার সমাধান নিহিত রয়েছে বলে মনে করি আমরা।

পাঠকের মতামত: